গল্প-অন্যরকম ভালোবাসার গল্প

অন্যরকম ভালোবাসার গল্প
-সুনির্মল বসু

 

 

দীঘল দীঘি, ঝাউবন, সুপারি গাছের ছায়া, রাতের জ্যোৎস্না চুঁইয়ে পড়ছে চরাচর জুড়ে, মৃদুল বাতাস মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে, দূর আকাশে সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে।

ছাতিম বন পার হয়ে অনুরাধা এসে দাঁড়ালো দীঘির পাড়ে। সুগত অনেকক্ষণ ধরে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল।
-এত দেরি হল?
-টিউশনি সেরে বাস পেতে দেরি হয়ে গেল। -আমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলে বুঝি,
-হু,
-সরি, কি করবো বলো,
-না না ঠিক আছে,
-আমারও এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখা করা ভালো লাগছে না,
-আমি তো চাকরি চেষ্টা করছি, না হলে কি করব বলো,
সুগত একটা সিগারেট ধরালো।
-আবার ওইসব ছাইপাশ খাচ্ছো, কতদিন ছাড়তে বলেছি,
+আমার হবে না,
-ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়,
-আমি যাকে ভালোবাসি, তাকে ছাড়ি না,
-ভ্যাট, বাজে কথা বোলো না,
-তারপর, তোমার খবর কি,
-বাড়ি থেকে পাত্র দেখা চলছে, তুমি একটা কাজ যোগাড় করো,
-এখানে কোথায় চাকরি, তবু চেষ্টা তো করছি,
-দ্যাখো, আকাশের চাঁদটা কি সুন্দর,
-হু,
-কী নির্জন প্রকৃতি, তুমি কবিতা লিখতে পারতে,
-আমি যদি জীবনানন্দ দাশ হতাম, অথবা হতাম সুনীল গাঙ্গুলী, তাহলে রাতের এই বর্ণনা লিখে যেতে পারতাম,
-সুনীলদার একটা কবিতা শোনাবে,
“এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ, আমি কি এ হাতে কোন পাপ করতে পারি, এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে ভালোবাসি, এই ওষ্ঠে এত মিথ্যা কি মানায়।”
-দারুন দারুন,
-সামনের সপ্তাহে মন্দারমনি যাবার প্ল্যান আছে, তুমি যাবে,
-ওখানে বড্ড ভীড়,
-আমরা ভিড়ের বাইরে থাকবো,
-তাহলে যাবো,
-একটা কথা জিজ্ঞাসা করব,
-বলো,
-শেখর চ্যাটার্জি এখনো তোমায় ডিস্টার্ব করে?
-পথে দুদিন কথা বলতে চেয়েছিল, আমি পাত্তা দিইনি,
-তোমার বাড়ি কি বলছে,
-মা-বাবার ওর ব্যাপারে আগ্রহ আছে, শত হলেও পয়সাওয়ালা ওরা,
-দুনিয়া টাকার বশ,
-কিন্তু আমি তো ওকে ডিসলাইক করি,
-জানি,
-তোমাকে একটা কাজ জোগাড় করতেই হবে,
-চেষ্টা তো করছি, না হলে কি করব,
+জানো সুগত, আমি বাড়িতে একটা রজনীগন্ধা ফুলের গাছ বসিয়েছি, প্রতিদিন গাছে জল দিই, গাছটা বড় হচ্ছে, গাছটা কি নাম রেখেছি, জানো,
-কি!
-ভালোবাসার গাছ,
-বাহ, এমন সুন্দর করে তুমি ভাবতে পারো,
-পারি তো, আমাদের ভালবাসাও বড় হবে, গাছটাও বড় হবে,

অনেকদিন অনুরাধার দেখা নেই।
সুগত হতাশ। কোথাও চাকরির দেখা নেই। বেকারত্বের অভিশাপ ওর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এত ব্যর্থতা নিয়ে জীবন কাটানো বড় শক্ত ব্যাপার।
সেদিন জনতা রেস্টুরেন্টে বন্ধু অনিকেতের সঙ্গে দেখা। কথায় কথায় অনিকেত বলল, ও শুনেছে, শেখর চ্যাটার্জির সঙ্গে অনুরাধার বিয়ে আগামী মাসে।
মাথায় বাজ পড়ল সুগতর।
সুগত নিজেকে বোঝালো, আমি এই শহরে আর থাকবো না, এই শহর আমাকে কিছু দেয়নি, নিজের মতো করে বেঁচে থাকার সুযোগটুকু পেলাম না এই শহরে, আমি এখান থেকে দূরে চলে যাবো,

সপ্তাহখানেক বাদে সুগতর কাছে একটা ফোন এলো।
-হ্যালো,
-আমি শেখর চ্যাটার্জী বলছি,
-বলুন,
-অনুরাধার বাড়ি থেকে পাত্র হিসেবে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল,
-এসব জেনে আমি কি করবো,
-আরে শুনুন মশাই,
-হ্যাঁ বলুন,
-আমি অনুরাধার সঙ্গে ফোনে কথা বললাম, ও আপনাকে ভালোবাসে, তাই ওদের বাড়ির প্রস্তাব আমি গ্রহণ করতে পারি নি, আপনি অনুরাধাকে বিয়ে করুন।
-কিন্তু আমার চাকরি নেই, আমি বেকার,
-সেটা সমস্যা হবে না,
-সেটাই বড় সমস্যার,
আমি আপনাদের ভালোবাসাকে সম্মান -দিতে চাই।
-কিভাবে?
-আমার কোম্পানিতে আপনি কাজে যোগ দিন। আপনার কোয়ালিফিকেশন,
-বি.কম অনার্স,
-একাউন্টেন্ট হিসেবে কাজে আসুন।
-আপনি এ কথা অনুরাধাকে বলেছেন?
-না,
-কেন,
-ওর ধারণা, পয়সাওয়ালা লোক মাত্রই খারাপ, আপনি কালই একবার আমার অফিসে আসুন।

মধ্যরাত। দীঘির জলে উতরোল ঢেউ। অনুরাধা সঙ্গে দেখা করতে এলো সুগত।
আমার চাকরি হয়েছে, অনু।
-কোথায়,
-শেখর চ্যাটার্জির কোম্পানিতে,
-তাই বুঝি,
-হ্যাঁ তো,
-আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম,
-কেন,
-আমার বাড়ি থেকে যখন বিয়ের প্রস্তাব গেল, আমি তখন শেখর বাবুকে সবকিছু ভেঙে বলেছিলাম,
-উনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন, আমাদের ভালোবাসাকে সম্মান জানাবেন।
-তাহলে,
কাল তুমি একবার আমাদের বাড়িতে এসো। আমার বাবা মা-র সঙ্গে কথা বলো,

পরদিন সন্ধ্যায় সুগত অনুরাধারদের বাড়িতে গেল।
ও বাড়িতে তখন খুশির হাওয়া। অনুরাধা বলল,
আমার ভালোবাসার গাছটায় ফুল এসেছে, একবার দেখবে না?
সুগত দেখলো, বাতাসের রজনীগন্ধা সুবাস ছড়িয়েছে। নাকি, গাছে ভালোবাসার ফুল ফুটেছে।
বাইরে মোটর গাড়ির শব্দ।
শেখর চ্যাটার্জী এসেছে।
অনুরাধা বলল, আসুন শেখরদা,
শেখর চ্যাটার্জী সুগতর হাত ধরে বলল, বিয়েতে আমাকে ইনভাইট না করলে, চলবেনা কিন্তু ,ব্রাদার।

Loading

Leave A Comment